Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লবণাক্ত অঞ্চলে আমন ধান উৎপাদন কৌশল

লবণাক্ত অঞ্চলে আমন ধান উৎপাদন কৌশল
ড. সত্যেন ম-ল
বৈশ্বিক উষ্ণতার পাশাপাশি, বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক বিন্যাসেও আমূল পরিবর্তন এসেছে, ফলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও কৃষকদের সেচ দিয়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশে প্রায় ২৫ লক্ষ হেক্টর উপকূলীয় অঞ্চল এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ত। তার মধ্যে ৬.৫ লক্ষ হেক্টর  বৃহত্তর খুলনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলা জেলায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চাঁদপুর জেলায় লবণাক্ততা রয়েছে। সাধারণত (শূন্য) ০-২ ডিএস/মিটার মাত্রার মাটিকে লবণাক্তশূন্য মাটি বলা হয়। এছাড়া ২-৪, ৪-৮, ৮-১৫ ও ১৫ ডিএস/মিটার এর অধিক মাত্রাকে  যথাক্রমে স্বল্প, মধ্যম, লবণাক্ত ও অতিমাত্রার লবণাক্ত মাটি বলা হয়। যাইহোক বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে আমন ধান উৎপাদন প্রযুক্তির বিষয়ে আলোকপাত করি।
বীজধান শোধন প্রক্রিয়া
বীজধান বপনের পূর্বে শোধন করে নিলে অনেক বীজবাহিত রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে শোধনের জন্য ৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ১৫ মিনিট বীজ ডুবিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয়। বীজ যদি দাগযুক্ত হয় এবং বাঁকানি আক্রমণের আশঙ্কা থাকে তাহলে কার্বেনডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে। তিন গ্রাম ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে এক কেজি পরিমাণ বীজ পানিতে ডুবিয়ে নাড়াচাড়া করে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর বীজ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এভাবে শোধনকৃত বীজ বাঁশের টুকরি বা চটের বস্তায় ভরে খড়/বস্তা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন। এভাবে জাগ দিয়ে আমন মওসুমের জন্য ৪৮ ঘণ্টা বা দুই দিনে, ভাল বীজের অঙ্কুর বের হলে বীজতলায় বপন করা যেতে পারে।
আমন মৌসুমে লবণাক্ত এলাকায় বীজতলা তৈরি ও বীজ বপন
উঁচু এবং উর্বর জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। যেসব এলাকায় উঁচু জমি নেই সেসব এলাকায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মণ হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের উপযুক্ত সময়  ১৫ আষাঢ়- ১৫ শ্রাবণ (যাদের জীবনকাল ১৩৫ দিন বা তার বেশি)। চারা রোপণের  উপযুক্ত সময়  ১৫ শ্রাবণ থেকে-১৫ ভাদ্র (৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা, যাদের জীবনকাল ১৩৫ দিন বা তার বেশি)। আবার যেসব জাতের জীবনকাল ১২০-১৩৫ দিন, সেইসব জাতগুলো ২৫ আষাঢ়ের পর বীজ বপন করে ২৫-৩০ দিনের চারা রোপণ করা যায়। তবে যেসব জাতের জীবনকাল ১২০ দিনের কম সেই জাতগুলো ১০ শ্রাবণের পর বীজ বপন করে, ২০-২৫ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। অন্যদিকে নাবি রোপা আমন ধানের জাত ৪৫-৬০ দিনের বয়সের চারা ভাদ্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত রোপণ করা যায়। লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতগুলো (যেমনঃ ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩,  ব্রি ধান৭৮) ও আলোক-সংবেদনশীল জাতগুলো (যেমনঃ বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৫৪) এর ৩০-৩৫ দিনের চারা ১৫ ভাদ্র (৩০ আগস্ট) পর্যন্ত রোপণ করা যায়। তবে অধিক আলোক-সংবেদনশীল জাতগুলো, ক্ষেত্র বিশেষে  ১ আশ্বিন (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে।
আমন বীজতলায় রোগ ব্যবস্থাপনা
আমন বীজতলায় বাঁকানি রোগ দেখা দিতে পারে। বাঁকানি রোগাক্রান্ত ধানের চারা স্বাভাবিক চারা অপেক্ষা হালকা সবুজ, লিকলিকে, ও স্বাভাবিক চারার চেয়ে অনেকটা লম্বা হয়ে অন্য চারার ওপরে ঢলে পড়ে। আক্রান্ত চারাগুলো ক্রমান্বয়ে মারা যায়। আক্রান্ত চারার নিচের গিট থেকে অস্থানিক শিকড়ও দেখা যেতে পারে। বাঁকানি রোগ দমনের জন্য ১ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম অটোস্টিন বা নোইন মিশিয়ে তাতে ১ কেজি ধানের বীজ অথবা চারা ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে শোধন করা যায়। অন্য উপায়গুলো হলো-আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। বীজতলা হিসেবে একই জমি বারবার ব্যবহার না করা।
সম্পূরক সেচ
আমন ধান পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর  হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়াতে আমন চাষাবাদ আজকাল আর পুরোটাই বৃষ্টিনির্ভর থাকছে না। আমনের বৃষ্টিপাত সময়মতো না হলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। বৃষ্টিনির্ভর ধানের জমিতে যে কোন পর্যায়ে সাময়িকভাবে বৃষ্টির অভাবে খরা হলে লবণাক্ত অঞ্চলে অবশ্যই স¦াধু পানি দিয়ে সম্পূরক সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে সম্পূরক সেচের সংখ্যা একাধিক হতে পারে। তা না হলে ফলনে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া আবাদি জমির এক কোণায় গর্ত বা ছোট পুকুর (যা মূল জমির শতকরা ৫ ভাগ) করে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরবর্তীতে রবি মৌসুমে মাদাজাতীয় সবজি যেমন-তরমুজ, কুমড়া ইত্যাদি চাষে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সার ব্যবস্থাপনা
মাটির উর্বরতার মান যাচাই এবং ধানের জাত, জীবনকাল ও ফলন মাত্রার উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ঠিক করা হয়। তবে লবণাক্ত এলাকায় রোপণকৃত জমিতে বিঘাপ্রতি ইউরিয়া-টিএসপি-এমওপি-জিপসাম যথাক্রমে ২৩-৯-১৩-৮ কেজি হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। জমি তৈরির শেষ চাষে  সমস্ত টিএসপি-এমওপি-জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান তিন কিস্তিতে, ১ম কিস্তি চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর, ২য় কিস্তি চারা রোপণের ২৫-৩০ দিন পর এবং ৩য় কিস্তি কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। মূল জমিতে ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম লিবরেল জিংক স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে। রোপা আমন ধানের জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৩০০ কেজি জৈবসার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার শতকরা ৩০ ভাগ কমানো সম্ভব।
আগাছা ব্যবস্থাপনা
ধানক্ষেত রোপণের পর ৩০-৪০দিন পর্যন্ত আগাছামুক্ত রাখতে হবে। রোপা আমনে ধান রোপণের ১৫ দিন পর একবার এবং প্রয়োজনে ৩০-৩৫ দিন পর আবার নিড়ানি দিতে হবে। আগাছানাশক প্রয়োগের সময় জমিতে ১-৩ সেন্টিমিটার পানি থাকলে ভাল। আমন মৌসুমে আগাছানাশক প্রয়োগের পর সাধারণত হাত নিড়ানির প্রয়োজন হয় না। তবে প্রয়োজনে আগাছানাশক প্রয়োগের ৩০-৪০ দিন পর হাত নিড়ানি দিতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
আমনের মুখ্য পোকাগুলো হলো- মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুংগি পোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামি গাছফড়িং, সাদা পিঠ গাছফড়িং, গান্ধি পোকা, শীষকাটা লেদাপোকা, পামরি পোকা ইত্যাদি। পোকার ক্ষতির মাত্রা পোকার প্রজাতি, পোকার সংখ্যা, এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ, জমি বা তার আশেপাশের অবস্থা, ধানের জাত, ধানগাছের বয়স, উপকারী পরভোজী ও পরজীবী পোকামাকড়ের সংখ্যা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। ধানক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা দেখা গেলে এর সাথে বন্ধু পোকা, যেমন- মাকড়সা, লেডি-বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটলসহ অনেক পরজীবী ও পরভোজী পোকামাকড় কি পরিমাণে আছে তা দেখতে হবে এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দমন করলে রোপা আমন মওসুমে শতকরা ১৮ ভাগ ফলন বেশি হতে পারে। ধানক্ষেতে ডালপালা পুঁতে দিয়ে মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। আলোক ফাঁদ/সোলার লাইট ট্রাপের সাহায্যে মাজরাপোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা, সবুজ পাতাফড়িং ও গান্ধি পোকার আক্রমণ কমানো যায়। জমি থেকে পানি বের করে দিয়ে চুংগি পোকা, বাদামি গাছফড়িং এবং সাদা পিঠ গাছফড়িং পোকার আক্রমণ কমানো যায়। উল্লেখিত ব্যবস্থা গ্রহণের পরও পোকার আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হলে মাজরাপোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুংগি পোকা দমনের জন্য সানটাপ ৫০ পাউডার প্রতি বিঘায় ১৮০-১৯০ গ্রাম হারে ব্যবহার করতে হবে। মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা দমনের জন্য ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি প্রতি বিঘায় ১০ গ্রাম হারে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাদামি গাছফড়িং ও সাদা পিঠ গাছফড়িং দমনের জন্য মিপসিন ৭৫ পাউডার প্রতি বিঘায় ১৭৫ গ্রাম, পাইমেট্রোজিন ৪০ ডব্লিউজি ৬৭ গ্রাম, ডার্সবান ২০ ইসি ১৩৪ মিলি হারে ব্যবহার করতে হবে। পাতা মোড়ানো পোক্,া চুংগি পোকা ও শীষকাটা লেদা পোকা দমনের জন্য কার্বারিল ৮৫ পাউডার অথবা সেভিন পাউডার প্রতি বিঘায় ২২৮ গ্রাম হারে ব্যবহার করতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা
আমন মেীসুমে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া, খোলপোড়া, ব্লাস্ট, বাদামি দাগ, খোল পচা, টুংরো, বাঁকানি, এবং লক্ষ্মীরগু  সচরাচর দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলো হলো খোলপোড়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা  পোড়া, ব্লাস্ট, টুংরো, বাঁকানি এবং লক্ষীরগু রোগ। খোলপোড়া রোগ দমনের জন্য পটাশ সার সমান দুই কিস্তিতে ভাগ করে এক ভাগ জমি তৈরির শেষ চাষে এবং অন্য ভাগ শেষ কিস্তি ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুকনা পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এছাড়া ফলিকুর, নেটিভো এবং ¯েপার ইত্যাদি ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করে সফলভাবে দমন করা যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ৬০ গ্রাম এমওপি, ৬০ গ্রাম থিওভিট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। থোড় বের হওয়ার আগে রোগ দেখা দিলে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এ মওসুমে সকল সুগন্ধি ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ধানে থোড়ের শেষ পর্যায় অথবা শীষের মাথা অল্প একটু বের হওয়ার সাথে সাথে প্রতিরোধমূলক ছত্রাকনাশক যেমন ট্রপার অথবা ন্যাটিভো ইত্যাদি অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
উপরে উলে¬খিত বিভিন্ন কলাকৌশল সঠিকভাবে মেনে ধানের আবাদ করলে  কিছুদিন পর ধানের শীষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত হলে ফসল কেটে মাঠেই বা উঠানে এনে মাড়াই করতে হবে। মাড়াই করার পর অন্তত ৪-৫ বার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে শুকানোর পর ঝেড়ে নিয়ে গোলাজাত বা সংরক্ষণ করতে হবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, মোবাঃ ০১৭১২৪০৫১৪৯, ই-মেইল; satyen@bsmrau.edu.bd   


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon